নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে শয্যাসায়ী বৃদ্ধা মাকে তৈলাক্ত খাবার দিতে নিশেধ করায় ভাই-ভাতিজার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে বোনের বিরুদ্ধে। বাদী বোন রেবেকা খাতুনের বাড়ী উপজেলার বাখরাবাদ গ্রামে এবং বিবাদী ভাইদের বাড়ী একই উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী-বিবাদীর মা বৃদ্ধা রাজিয়া সুলতানা(৮৫) শয্যাসায়ী। মাকে ছেলেরা দেখাশুনা করেন না। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানার পর বাদী রেবেকা খাতুন তার ছেলে হারুনুর রশীদ পিন্টুকে নিয়ে ঈদ-উল-ফিতরের দিন কিছু খাবার নিয়ে শ্যামপুর গ্রামে মাকে দেখার জন্য যান। মার সাথে দেখা করতে এমনকি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খাবারও খেতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি বাদী স্থানীয় গণ্যমান্যদের জানালে পরদিন সুরাহা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরদিন গণ্যমান্যরা কোন ব্যবস্থা করে না দিলে বাদী তার ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে আবারও দেখা করতে যান। এতে বাড়ির দরজায় বৃদ্ধার বড় ছেলে রেজাউল হক নান্নু, মেঝ ছেলে মুন্নু ও ছোট ছেলে মঞ্জুরুল হক মঞ্জু এবং রেজাউল হকের ছেলে সাব্বির আহমেদ সাগর মারপিট করে বাদী ও তার ছেলেকে জখম করে। ঘটনায় বাদী তার তিন ভাই ও ভাতিজাসহ সাত জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদী-বিবাদীর মা বৃদ্ধা রাজিয়া সুলতানা প্রায় ১ বছর থেকে দুই পা ভেঙে শয্যাসায়ী। বিছানায় গোসল, খাওয়া ও প্রকৃতির কাজ করে থাকেন। তিন ছেলে পালা করে তাদের মাকে দেখাশুনা করেন। ডাক্তার তৈলাক্ত খাবার খাওয়াতে নিশেধ করেছেন। বোনের নিয়ে আসা তৈলাক্ত খাবার মাকে না খাওয়ানোর জন্য ভাইয়েরা নিশেধ করে। কিন্তু তারপরও তারা খাবারের জন্য জোর করে। ভাইদের হয়রানী করতেই বোনের এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
শয্যাসায়ী বৃদ্ধা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার তিন ছেলে তারাই সেবা যত্নসহ দেখেশুনা করে। ছেলেরা না থাকলে হয়ত এতোদিন মারা যেতাম। ছেলেদের বিরুদ্ধে মেয়েরা যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। নিজের মেয়ে হতে পারে তবে তারা খুবই দুষ্টু ও বদ মেজাজের।
বৃদ্ধার বড় ছেলে রেজাউল হক নান্নু বলেন, ডাক্তার মাকে তৈলাক্ত খাবার খাওয়াতে নিষেধ করেছে। তৈলাক্ত খাবারে মা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বোনেরা মাকে দেখে ২/১দিন থাকবে চলে যাবে। কিন্তু তারা তো আর দেখাশুনা করে না। পয়নিষ্কাশন আরো দুর্গন্ধ হয়। যা আমাদেরই পরিষ্কার করতে হয়। এজন্য তাদের নিয়ে আসা তৈলাক্ত খাবার খাওয়াতে আমরা নিষেধ করায় উল্টো আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। আবার আদালতে গিয়ে মিথ্যা মামলা করেছে একারনে আমাদের তিন পরিবারের সবাই এখন বাড়ি ছাড়া।
স্থানীয় প্রতিবেশী সাজ্জাদ হোসেন, আসমা বেগম ও বয়জ্যেষ্ঠ তহমিনা বলেন, ছেলেরা পালা করে তাদের মাকে দেখাশুনা করে থাকে। তবে মেয়েদের কোন ধরনের সেবা করতে দেখা যায়নি। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই মেয়েরা খাবার নিয়ে আসে। খাবার দিতে নিশেধ করায় বোনেরা ঝগড়া শুরু করে।
এ ব্যাপারে বাদী রেবেকা খাতুন ও তার ছেলের রুহুল উভয়ের নাম্বারে ফোন দিলে সাংবাদিকের পরিচয় জানান পর রং নাম্বার বলে ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে রাখেন।
এ ব্যাপারে মহাদেবপুর থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক (এসআই) জয়দাস বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় আছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।