সােহেল রানা, সাভার ।
গত ১৬ মে সাভারের রাজাশন এলাকায় কয়েকজন জয়কে রড দিয়ে বেদম মারধর করে। মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাত পাওয়া জয়কে পরে এনাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে মোবাইল গেম খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের মারধরে আহত শিক্ষার্থী জয় হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে। সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২২ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। এদিকে হাসপাতালের বিলের টাকা শোধ করতে না পারায় মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর মরদেহ দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে জয়ের পরিবার। তবে এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। নিহত জয় সাভারের রাজাশনের পলু মার্কেট এলাকার জন হাওলাদারের ছেলে। সে সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সোমবার রাতে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সাভার মডেল থানা পুলিশ। গত ১৬ মে সাভারের রাজাশন এলাকায় কয়েকজন জয়কে রড দিয়ে বেদম মারধর করে। মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাত পাওয়া জয়কে পরে এনাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ১৮ মে জয়ের ভাই উজ্জল হাওলাদার ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন সাভারের রাজারবাগের আরিফ মিয়া, ভোলার ইলশা থানার তালুকদার হাট গ্রামের আকাশ, রাজাশন এলাকার জয়, সাদ্দাম, রাজাশন এলাকার তানভীর, সওদাগর, নয়ন, সাকিব ও সোহান। উজ্জল বলেন, “যেদিনকা মারছে তার আগের দিন ‘ফ্রি ফায়ার গেমস’ খেলা নিয়া আমার ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ওদের সাথে আমার ভাই মিশত না। কিন্তু ফ্রি ফায়ার গেমসে অনলাইনে একজন আরেকজনের সাথে কথা কাটাকাটি হয় না? ‘ওইভাবে ওদের সাথে কথা কাটাকাটি হইছে।
আমার ভাই ও তার বন্ধুরা তো জানতো না যে, যাদের সাথে কথা কাটাকাটি হইছে তারা বখাটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটার রেশ ধরে গত ১৬ মে রাজাশন পলু মার্কেট এলাকায় আমার ভাই ও তার দুই বন্ধুকে মারধর করা হয়। সওদাগরের নেতৃত্বে ১০-১২ জন দেশি অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় আমার ভাইয়ের সাথে থাকা দুই বন্ধু সামান্য আহত হলে তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু রড দিয়ে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করার কারণে সে পালাতে পারেনি। পরে বখাটেরা মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় তার মাথায় উপর্যুপরি রড দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে চলে যায়।’ একদিন পর ভাইয়ের মরদেহ পাওয়া নিয়ে উজ্জ্বল বলেন, ‘অনেক কষ্টে আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে ৫ হাজার, ১০ হাজার করে চাইয়া টাকাগুলা জোগাড় করে সন্ধ্যা বেলা লাশ ছাড়াইছি।
বকেয়া ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পুরাটাই দেয়া লাগছে। কাইলকা থেকে লাশ হাসপাতালের মর্গেই ছিল।’ এ বিষয়ে এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সিইও আনোয়ার কাদির নাজিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছিল। এখন মার্ডার কেসের ধারা সংযোজনের আবেদন করা হয়েছে। অপরাধীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কি না-এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘আসামিরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। এ ঘটনায় আগেই তিনজন গ্রেপ্তার ছিল। পরে আদালতে তিনজন আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়ে আসছে।’