গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি ঃ
সরকার ইতিমধ্যেই শিল্পের পাশাপাশি শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে আবাসিক খাতে ও গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন।
আর এতে মানুষের জীবনে এসেছে আধুনিকতা ও স্বাচ্ছন্দ্যতা। কিন্তু মহামূল্যবান এই গ্যাস কে কিছু অসাধু ব্যক্তিরা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প কারখানায় বিকল্প ভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে সরকারকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছেন। আর এই অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে ঠিকাদাররা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং তাদের অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। দিন দিন অবৈধ গ্যাস সংযোগ কারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এলাকায় স্থানীয় দালাল ও তিতাসের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।আর এতে বাড়ছে প্রাণহানীর ঝুঁকিও সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে যেসকল ঠিকাদার জড়িত সম্প্রতি গণমাধ্যমে ও অনুসন্ধানে তাদের নাম বেরিয়ে এসেছে,তারা হলেন, কথিত ঠিকাদার সাদ্দাম ফরাজী, সোলায়মান মুন্সী, ফয়েজ, শরীফ, শামীম, কাজল, জয়নাল আবেদীন সহ একটি বিরাট সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধান এবং সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজারে সোলেমান মুন্সির অফিস অর্থাৎ যেটি দ্বিতীয় গ্যাস অফিস নামে পরিচিত, সেখানে গ্যাস অফিসের মূল্যবান বই কাগজপত্র ও নথি সন্নিবেশিত রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গ্যাস অফিসের বিপুল পরিমাণ বই ও কাগজপত্র, নথিপত্র জব্দ করা হয় এবং সেখান থেকে সোলায়মান মুন্সির ছেলে ফয়েজ মুন্সীকে আটক করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় গাজীপুরের বোর্ডবাজারে সোলায়মান মুন্সির তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি ও নামে-বেনামে প্লট, জমি ও ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ড বাজারের বাসিন্দা জানান, এই সোলেমান মুন্সি যখন প্রথম বোর্ড বাজারে আসেন তখন একেবারে শূন্য হাতে এসেছিলেন। কিন্তু অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে তিনি অল্প দিনেই কোটিপতি হয়ে যান। আর তার এই অবৈধ কাজে সহায়তা করেন তার ছেলে এবং তিতাস গ্যাসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। অর্থাৎ সর্ষের ভিতর ভূত। সোলায়মান মুন্সি এবং ফয়েজ মুন্সি অর্থাৎ তাদের এই বাপ-ছেলের দুর্নীতির কথা গাজীপুরের সবাই জানে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার দায়ে কিছুদিন পর পর জেলে যায়। আবার জামিনে বের হয়ে সেই একই কাজ করে।
তিতাসের চিহ্নিত আরেক দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার জয়নাল আবেদীন। গেল কয়েক বছর পূর্বেও নিঃস্ব ছিল এই জয়নাল আবেদীন অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার মাধ্যমে সেও অল্প দিনেই কোটিপতি বনে গেছেন। বোর্ড বাজারের ফকির মার্কেটে তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, জমি ও প্লট । অভিযুক্ত অন্য ঠিকাদারের নাম সাদ্দাম ফরাজী। এই সাদ্দাম ফরাজীর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় রয়েছে তার বিঘা বিঘা জমি এবং গাজীপুর মহানগরের মিরের বাজারে রয়েছে তার একটি কারখানা।
অর্থাৎ বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ সংযোগে লাভ বেশি। তাইতো সোলেমান মুনসিদের মত ধান্দাবাজ ও দুর্নীতিবাজরা এ পথেই ছুটছেন বেশি। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সকল ধরনের গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও অবৈধ এই ঠিকাদারদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ নাই। তারা রাতের অন্ধকারে চুরি করে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন এবং রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশের ক্ষতি করছেন। রাষ্ট্রের এই চিহ্নিত শত্রুদের রুখতে হবে এখনই। এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সংবাদ ছাপা হওয়ার পর এই অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে যে সকল ঠিকাদার জড়িত তারা ইতিমধ্যেই নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। অবৈধ গ্যাসের বিষয়টি নিয়ে যাতে মিডিয়াতে আর কোন সংবাদ না আসে সেজন্য তারা বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিকদের গোপনে মেনেজ করার জন্য অপচেষ্টা করছেন, তিতাস গ্যাস অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট বিষয়টি মীমাংসার জন্য দিনরাত ধরণা দিচ্ছেন।
কিন্তু তিতাস গ্যাস থেকে সাংবাদিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যারাই অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে যে সকল ব্যক্তি বা কন্টাকটার এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ এর সাথে জড়িত তাদের লাইসেন্স বাতিল সহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো সুপারিশ বা তদবির কোনো মতেই গ্রহন করা হবে না, তারা যত ক্ষমতাশালী হোক কিংবা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক এক্ষেত্রে সেগুলো মোটেও দেখা হবে না। যেকোনো মূল্যে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর তিতাস গ্যাস অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহজাদা ফরাজী বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি।