সবুজ মিয়া,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঃ
ঝিনাইদহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুসের সরলতার সুযোগ নিয়ে আপন বড় ভাই গোলাম মস্তোফা (মুক্তি যোদ্ধা) জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পদে পদে ঠকিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এরই জের ধরে তার সম্পদের হিসাব নিতে যেয়ে তাকে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন এমনকি গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি এই অভিযগে তুলে ধরেন।
এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগি গোলাম কুদ্দুস। যার জিডি নং- ১২৯৩, তাং ২৪-০৩-২১ ইং। ভুক্তভোগী গোলাম কুদ্দুস জেলার শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত আছাননগর গ্রামের মৃত সদর উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। জানা যায়, গোলাম কুদ্দুস বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র সুপারভাইজিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মুক্তি যোদ্ধা বড় ভাই গোলাম মোস্তফাকে বাবার মতই শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন।
গোলাম কুদ্দুস বলেন, মেঝো বোনের ছেলে কাজলের কাছ ছেকে বিভিন্ন সময় টাকা হাওলাত নিয়ে ৬ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে যায় তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফা। অনেক দিন পার হয়ে গেলেও টাকা ফেরত না দেওয়ায় ভাগ্নে কাজল টাকা নিতে চাপ দিতে থাকে। ভাগ্নে কাজলের চাপে পড়ে দিশেহারা হয়ে সে এক সময় আমার দারস্ত হয়। তিনি বলেন, সেসময় তার জমানো টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা এবং দুই বিঘা জমি যা বাজার মুল্যের থেকেও কম দামে বিক্রি করে ৪ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে সর্বমোট ৫ লক্ষ টাকা লোণ হিসাবে তাকে দেওয়া হয়। তারপর সে ভাগ্নে কাজলের টাকা পরিশোধ করে। এই ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়য়ে বড় ভাই গোলাম মোস্তফা তাকে পৈত্রিক ১ বিঘা জমি বিক্রি করে ১ লক্ষ ৯০ হাজার এবং বাকি টাকার বিনিময়য়ে পৈত্রিক (তার ভাগে পাওয়া) ২৮ শতক জমি তার নামে লিখে দেয়। এই ২৮ শতক জমি এবং একই দাগে থাকা আব্দুল কুদ্দুসের ২৮ শতক, মোট ৫৬ শতক জমি তার বড় দুলাভাই এর জিম্মায় রেখে বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা করে অন্যত্র লিজ দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী গোলাম কুদ্দুস আরও জানান, কিছু দিন ধরে লিজের ১০ হাজার টাকা করে পেয়ে আসছিলো সে। পরে যখন লিজের টাকা আর না দেয়, তখন তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যে তার বড় ভাই এবং বড় দুলাভাই মিলে ঐ ৫৬ শতক জমি জনৈক কৃষকের কাছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়য়ে বন্ধক রেখেছেন। তিনি বলেন, গত ২০২০ সালের জুলাই মাসের দিকে বড় ভাই গোলাম মোস্তফা তাকে জানান যে, ঐ ৫৬ শতক জমির মধ্য থেকে ২৮ শতক জমি ভাটই স্কুলে দান করবেন বলে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতেও বড় ভায়ের সম্মান রক্ষার্থে কোন বাঁধা আব্দুল কুদ্দুস দেইনি। তবে আব্দুল কুদ্দুসের সরলতার সুযোগ নিয়ে একের পর এক তার জমি নিয়ে অন্যত্র বন্ধক রাখা ও দান করার বিষয়টি সন্ধেহ জনক মনে হয়। এরপর তার পাওনা জমি চেয়ে চাপ দিতে থাকলে, স্কুলে দেওয়া ২৮ শতক জমির পরিবর্তে আসাননগর মৌজা থেকে ২৫ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে দেয় এবং খুব দ্রুত বন্ধুকি রাখা বাকি ২৮ শতক জমি খালাশ করে দেবে বলে স্বীকার করে। তবে আজ অব্ধি সে (বড় ভাই) জমি বন্ধক ছাড়িয়ে দেয়নি বলে গোলাম কুদ্দুস জানান। গোলাম কুদ্দুস আরও জানান, মহান আল্লাহ পাকের রহমতে আমরা পরিবারের সবাই অর্থ নৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী। বড় ভাই গোলাম মোস্তফা শুধু আমার সাথে প্রতারণা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি! সে আমার বাবা-দাদার ঐতিহ্য নিয়েও প্রতারণা করেছে।
তিনি বলেন, এরই মাঝে ২০২০ সালের দিকে আমাদের কাউকে না জানিয়ে গ্রামের চায়না নামে এক নারীর স্বামীর কাছে বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তার ভাগের ২২ শতক জমি বিক্রি করেছে। যা পরে জানতে পেরে আমি তাদের কাছে জমি ফেরত চাইতে গেলে তারা বলেন, কোর্টে আমানত করেন। তিনি বলেন, এরপর বাবার রেখে যাওয়া জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আমি কোর্টে আমানত করি। ভুক্তভোগী গোলাম কুদ্দুস জানান, এই আমানত করার পর বড় ভাই গোলাম মোস্তফা তার উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং তার বাসায় এসে হুমকি দেই এই বলে যে, আমাকে কোন সম্পত্তি সে ভোগ দখল করতে দেবে না এবং গ্রামে গেলে আমাকে মেরে হাড় টুকরো টুকরো করে দেবে, এমনকি প্রয়োজনে তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে। তিনি বলেন আমি বড় ভায়ের কাছে জীবনের নিরাপত্তা হীনতাই ভুগছি। যে কারনে তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম মোস্তফা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে না জানিয়ে জমি বিক্রি করে ভুল করেছি, তবে এও বলেছি যাদের কাছে জমি বিক্রি করেছি তাদের পুরো টাকাটা দিয়ে জমি নিয়ে নিতে। কিন্তু আমার কাছে না শুনে সে কোর্টে আমানত করেছে। তবে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে জানান, আমি বড় ভাই হিসাবে তাকে শাসনের চোখে কিছু কথা বলেছি।