স্টাফ রিপোর্টার-
ঝিনাইদহ শৈলকুপায় ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে একজোট হয়ে আনারস প্রতীকের প্রচারণায় নেমেছিলেন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানরা। তাঁরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর আনারস প্রতীকের প্রচারণায় জোট বেঁধে ছবিও তোলেন একসাথে। এখন আবার ইউপি নির্বাচনের আগে সেই ছবি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করা ইউপি চেয়ারম্যানরা এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
এমন অবস্থায় দলের নেতা-কর্মীরা মুঠোফোনে এই ছবি চালাচালি করছেন। কোন সময় ফেসবুকে বয়ছে আলোচনার ঝড়। অনেকে ছবিটি নানা মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি নৌকার বিরোধীরা যেন মনোনয়ন না পান, সেই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, নেতাদের বক্তব্য ও সম্প্রতি তিন ধাপে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার পর মাঠপর্যায়ের নেতারা বুঝে নিয়েছেন, নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে নামলেই মনোনয়ন বঞ্চিত হতে হচ্ছে। বিগত দিনে যাঁরা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তাঁরাও মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
সে কারণে এই ছবি তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। তবে এখনো শৈলকুপা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রচারণায় ছবি তোলায় অংশ নেওয়া চেয়ারম্যানরা হলেন উপজেলার ১ নম্বর ত্রিবেণী ইউনিয়নের জহুরুল হক খান (পরবর্তী সময়ে মারা গেছেন) ত্রিবেনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সেকেন্দার মোল্ল্যা। ২ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, মকবুল হোসেন, মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ফিরোজ হোসেন, একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, আবু বক্কর। ৩ নম্বর দিগনগর ইউনিয়নের জিল্লুর রহমান তপন, ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোজ্জামেল হোসেন তুজাম, সাবেক চেয়ারম্যান পান্না খান। ৫ নং কাচেরকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার মামুন। ৬ নম্বর সারুটিয়া ইউনিয়নের মাহমুদুল হাসান মামুন। ৭ নম্বর হাকিমপুর ইউনিয়নের কামরুজ্জামান জিকু। ৮ নম্বর ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক, মতিয়ার রহমান।
১০ নম্বর বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ১১ নম্বর আবাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস, ১২ নং নিত্যান্দপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ মোল্ল্যা। ১৩ নম্বর উমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, চেয়ারম্যান সাব্দার হোসেন মোল্লা। ও ১৫ ফুলহরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান। এছাড়া তাঁদের সঙ্গে আরও দাঁড়িয়েছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামিম হোসেন মোল্লা সহ অনেকে। দলের স্থানীয় নেতারা জানান, শৈলকুপায় বিভিন্ন সময় নৌকার বিরোধিতা করার একটা প্রবণতা রয়েছে। এখানে মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া, দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করা, বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে দলের প্রভাবশালী নেতাদের কাজ করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নেতারা জানান, ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার দলীয় মনোনয়ন পান। তবে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এ ভোট নিয়ে দল দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে বহু মানুষ বাড়িঘর ছাড়া হন এই নির্বাচন কে কেন্দ্র করে। সাধারণ কর্মীরা মনে করেন, নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে স্থানীয়ভাবে দল বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যার প্রতিফলন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘটছে। এই বিষয়ে উপজেলার ৯ নম্বর মনোহরপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু বলেন, গোটা দেশে নৌকার বিরোধিতাকারীরা মনোনয়ন বঞ্চিত সহ নানাভাবে শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। আর শৈলকুপায় নৌকার পক্ষে ভোট করে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ছিলেন, তাই তাঁকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর কমিটির সভাপতি মারা গেলে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে তাঁকে ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। নৌকার পক্ষে থাকায় তাঁর বাড়িতেও হামলা করা হয়েছে। চেয়ারম্যানদের নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ফটোসেশন সম্পর্কে বলেন, আরও অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে, তাঁরা সবাই নৌকার বিরোধী। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যর ঐশ্বরিক এক শক্তির জোরে আবার তাঁরাই বিভিন্ন রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই শক্তি তাঁদের হয়ে কাজ করছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে আনারসের প্রচারণায় অংশ নেওয়া উমেদপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাব্দার হোসেন মোল্লা বলেন, ওই সময়ের ঘটনা আসন্ন নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আমাদের ছাড়া শৈলকূপায় কোন নেতার কিছু করার সাহস নেই। আমরা শৈলকূপা যেমন ইচ্ছা তেমন নাচাই আমাদের পছন্দের লোক না হলে আমরা তার পক্ষে নির্বাচন করিনা। আরেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার জানান, সেই সময়ের পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রভাবশালী এক নেতার ইন্ধনে আনারসের পক্ষ নিয়েছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অন্য রকম ফলে, তাঁরা নৌকার বিরোধিতা করেছেন এমন কারণে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছেন না তিনি। আরেক চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বলেন, তাঁরা আওয়ামী পরিবার। তাঁদের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করেন। সেই সময়ে আনারস প্রতীক নিয়ে কোনো ছবি তুলেছিলেন, এটা তাঁর মনে নেই। তিনি দাবি করেন, তিনি কখনো নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন না। শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমানে আহ্বায়ক পদে আছেন মতিয়ার রহমান। তিনি ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ওই ছবিতে তিনিও ছিলেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন কোনো ছবি তিনি তোলেননি। ওই ছবি নিয়ে কেউ অভিযোগ করবে বলে তিনি মনে করেন না। কেউ অভিযোগ করলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোন বাধা হবে না।