ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।
ঝিনাইদহে বীজ ব্যাবসা নিয়ে নানা আলোচনা ও বিভিন্ন সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন শহীদ বীজ ভান্ডার। তিনি নানা কৌশলে কৃষকের কাছে নিন্ম মানের বীজ বিক্রি করে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন। এছাড়া অনুমোদনহীন ভেজাল বীজ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ, লক্ষ টাকা। এতে করে ঝিনাইদহ চাষীদের মাঝে হতাশা তৈরি হতে চলেছে। সহিদ বীজ ভান্ডারের নকল মানহীন বীজ বিক্রির কারণে ঝিনাইদহ কৃষি উৎপাদন আজ হুমকির মুখে। একাধিক বার তার বীজ ব্যাবহার করে কৃষকের বছর শেষে লোকসান গুনতে হচ্ছে বহু অংশে ফলে কৃষিতে যেমন উৎপাদন কমে যাচ্ছে তেমনি কৃষকের ঋণের ভার আরো দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন অনুসন্ধানের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায় গত ২ মাস আগে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের ৯ জন কৃষকের কাছে সিলেক্ট স্বর্ণ জাতের ধানের বীজ বলে অন্য জাতের বীজ দেওয়ায় কৃষককের অভিযোগের ভিত্তিতে এক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শালিসে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। এছাড়া সহীদ বীজ ভান্ডার পিয়াজের দানা ভেজাল হওয়ায় অনেক কৃষকের পেঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। তবে শহীদ বীজ ভান্ডার এতো সব অবৈধ কারবার করে আশ্রয় নেন নানা কৌশলের জরিমানার ঘটনায় তিনি টাকা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই ঘটনার অন্যায় বিচার দাবি করেন। ৭/৩/২০২১/ সদর উপজেলার গয়েশপুর মাঝের পাড়া গ্রামের কৃষক শুকুর আলী জানান, ঝিনাইদহ শহরের সহিদ বীজ ভান্ডার থেকে সবজির বীজ কিনে তার মাথায় হাত। প্রথমে মুলার বীজ নিয়ে এসেছেন , আগাড়ী বীজ বোনার জন্য, কিন্তু সে বীজ বেরোয়নি। সে মুলা মোটা হচ্ছে না, পালন শাক না মুলা বুঝতে পারছে না। লাল জাতের বীজ কিনেছেন কিন্তু চাঁরা বেরিয়েছে সাদা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহিদ বীজ ভাণ্ডার থেকে চলতি মৌসুমে আগাম জাতের মুলার বীজ কিনে অনেকে ঠকেছেন। এই বিষয়ে সহিদ বীজ ভাণ্ডারের মালিক সহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে সে জানান এই শুকুর আলী তার কাছ থেকে কোন বীজ কেনেনি। স্বরজমিনে গণমাধ্যমের টিম তার বীজের দোকানে গিয়ে দেখতে পান ভারতীয় কোম্পানীর লেবেল লাগানো পেয়াজের বীজ নতুন করে সহিদ বীজ ভান্ডারের লেবেল করা প্যাকেটে ভরে বিক্রি করছে। এই বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন নিয়ম নেই তারপরেও এই ভাবেই সবাই ভারত থেকে বীজ নিয়ে এসে নিজেরা নতুন করে প্যাকেটে করে বিক্রি করে। কিন্তু সহিদ বীজ ভাণ্ডারের বীজ পরীক্ষা করার নিজস্ব কোন ল্যাব মেশিন নেই কিন্তু বীজ আমদানীর লাইসেন্স আছে। সহীদ বীজ ভান্ডারের বাজার থেকে বীজ কিনে এনে মোড়কজাত করে থাকে তাদের বীজ উৎপাদন করা নিজেস্ব কোন খামার নেই। এই বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ইসমাইল হোসেন জানান, সহিদ বীজ ভান্ডার তাদের অনুমোদিত ডিলার নয়। তিনি ভারত থেকে বীজ নিয়ে এসে অনুমোদন ব্যাতি রেখে নিজের লেবেলে বীজ বাজারজাত করতে পারেন না এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রত্যায়ন অফিসার বলেন আমি অভিযোগ পেয়েছি তার বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে ঝিনাইদহ বীজ প্রত্যয়ন অফিসে যেয়ে অফিসটি বন্ধ পাওয়া যায়। বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ইসমাইল হোসেন ছাঁড়াও আরও ২ জন কর্মচারী আছেন। অফিসার ইসমাইল হোসেন যশোর অফিসে বসেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে তিনি ঝিনাইদহে বসেন। অফিস বন্ধ পেলে অফিসার ইসমাইল হোসেনকে ফোন দিলে তিনি বলেন আজকে ছুঁটিতে আছেন। কিন্তু অন্য কর্মাচারীদের কেও অফিসে পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম শাহীন বলেন, আমিও খোঁজ করে তাদের পায় না। কখন অফিসে বসে কখন বসে না আমি জানিনা। ঝিনাইদহ বিএডিসির বীজ বিপণন অফিসার সুমি বাড়ই বলেন, বিএডিসির বীজ নিয়ে যদি কোন প্রতারণা করেন তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু উনি সম্ভবত বিএডিসির কোন ডিলার নন। এদিকে কৃষক শুকুর আলীর ১০ কাঠা জমিতে মুলার আবাদ হয়নি বীজের জন্য। এই গ্রামের কৃষক সিরাজ মুন্সি ও কদম আলীও মুলার বীজ কিনে ঠকেছেন। হরিণাকুণ্ডুর হাকিম পুর গ্রামের আরেক কৃষকের কপির বীজ কিনে ২ বিঘা জমিতে কোন আবাদ ঘরে তুলতে পারেননি। প্রতিদিনই কোন না কোন গ্রাম থেকে সহীদ বীজ ভাণ্ডার থেকে বীজ কিনে নানা সমস্যার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।