সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
সীতাকুণ্ডে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের সিএ টু (গোপনীয় সহকারী) তেজেন্দ্র কুমার দেবনাথকে অপহরণ করে ৩ লাখ টাকা আদায় করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। মুক্তিপণ আদায় শেষে দুস্কৃতিকারীরা তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে মহাসড়কের পাশে ফেলে যায়।
ভুক্তভোগী তেজেন্দ্র কুমার দেবনাথ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুমানিক সাড়ে ৬টায় তিনি সীতাকুন্ড বাসস্ট্যান্ড থেকে ফেনী যাওয়ার উদ্দেশে একটি মাইক্রোবাসে ওঠেন। মাইক্রোটি সীতাকুন্ড ছেড়ে যাওয়ার পরপরই ভেতরে থাকা যাত্রীবেশী ৬-৭ জন অপহরণকারী তার গলায় গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে।
এরপর তারা তার নাম পরিচয় জানতে চান এবং তিনি ইউএনও কার্যালয়ে চাকরি করেন জানতে পারার পর তার কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
তিনি এতো টাকা কিছুতেই দেওয়া সম্ভব নয় জানানোর পর তারা দর কষাকষি করতে থাকে। একপর্যায়ে তিন লক্ষ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে বলে তার ওপর অত্যাচার শুরু হয়। এতে বাধ্য হয়ে তেজেন্দ্র দেবনাথ তার স্ত্রীর কাছে ফোন করেন এবং যেকোনো উপায়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন।
এতে তার স্ত্রী ও ভাই বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছে টাকা ধার চেয়ে অপহরণকারীদের দেওয়া ৫টি মোবাইলে পাঁচভাগে টাকা প্রদান করেন।
এভাবে একটি মোবাইল নম্বরে ৫০ হাজার টাকা, একটিতে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, একটি নম্বরে ৫০ হাজার টাকা, একটি নম্বরে ৫০ হাজার টাকা এবং আরেকটি নম্বরে ২৫ হাজার টাকা দেন।
এরপর অপহরণকারীরা তাকে গাড়িতে রেখেই বাইরে থাকা তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের ফোন করে টাকাগুলো তুলে নেওয়া নিশ্চিত করার পর আরো কিছুক্ষণ তাকে মাইক্রোতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শেষে রাত ১০টার দিকে ফেনীর লালপোল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তার চোখে মরিচের গুঁড়ো মেখে দিয়ে তাকে মহাসড়কের পাশে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায়। পরে বহু কষ্টে তিনি কোনরকমে নিজ বাড়িতে ফেরেন।
তেজেন্দ্র দেবনাথ আরো জানান, গলায় গামছা দিয়ে টানাটানি ও শারীরিক নির্যাতনের ফলে বর্তমানে তিনি আহত অবস্থায় বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হয়ে এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।
ঘটনার বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, তেজেন্দ্র বাবু আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়ে আসলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাকে তিনি এখনো কিছু জানাননি। তিনি সুস্থ হয়ে আসুক। কথা বলে আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেবো।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের অলংকার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী চক্র এভাবে মাইক্রোবাস ও হাইএস গাড়ি নিয়ে যাত্রী তুলে পরে তাদের অপহরণ করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে আসছে। এতে বহু মানুষ সর্বস্ব খোয়ালেও চক্রের সদস্যরা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।