google.com, pub-4295537314387688, DIRECT, f08c47fec0942fa0
google.com, pub-4295537314387688, DIRECT, f08c47fec0942fa0
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
প্রথমে দেখলে মনে হবে কোন শ্মরনার্থী শিবির বা নতুন বছর উপলক্ষ্যে পিকনিকের আয়োজন কিন্তু না। নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তারা বাড়ি ছাড়া। নিজ গৃহে ফিরতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শাতাধিক পুরুষ ও শিশু শনিবার সকাল থেকে শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামের মাঠে আশ্রয় নিয়ে রান্না করে খাচ্ছেন।
বাড়ি গেলে তাদের মারধর করা হচ্ছে। তাদের মাঠ ঘাট বন্ধ, বাড়ির মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। ঘরবাড়ি ছাড়া এই পুরুষেরা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৬ ডিসেম্বর ওই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুমের পক্ষে ভোট করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অত্যাচারে তারা বাড়ি ছাড়া হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। হরিশংকরপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুজ্জামান ফরিদ নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৬০১ ভোটে। তবে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফরিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এই মানুষগুলো অনেকটা আত্মভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন।
তাদের কেউ মারধর বা অত্যাচার করেনি। বাড়ি ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা নবের আলী অভিযোগ করেন, দেশ স্বাধীন করার পর তাকে পালিয়ে থাকতে হবে তা ভাবতেও পারিনি। তিনি আজন্ম আওয়ামীলীগ করছেন। নৌকার ভোট করায় ছিল তার অপরাধ। এখন নির্জন মাঠে পালিয়ে খেচুড়ি রান্না করে কলার পাতায় খেতে হচ্ছে। কথাগুলো বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আসে তার কন্ঠ। হরিশংকরপুর ইউনিয়নে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বদরুল ইসলাম লালুও ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। তিনিও শৈলকুপার আশুরহাট গ্রামের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন।
জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, তাদের একমাত্র অপরাধ হচ্ছে নৌকায় ভোট দেওয়া। হরিশংকরপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামলীগের সভাপতি নুর আমিন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, “নৌকায় ভোট দিয়ে যদি তারা বাড়ি ফিরতে না পারেন তবে এক সময় আমাদের নেত্রীও কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকবেন কারণ তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি নৌকায় ভোট দিয়ে বাড়িছাড়া হয় এই দুঃখ কোথায় রাখবেন। তিনি বলেন তাদের দুইজন সাবেক সেনা সদস্যকে মারধর করা হয়েছে তারা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। একজনের কমলা বাগানের সব কমলা জোর করে পেড়ে নিয়ে গেছে। বাড়িতে নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। শিশুরা পর্যন্ত বাড়ি থাকতে পারছেন না।
বিষয়টি জেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। নুর আমিন মিয়া আরো বলেন, হরিশংকরপুর ইউনিয়নের প্রায় ২২ গ্রাম থেকে কমবেশি মানুষ বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শনিবার দুপুরে নৌকার প্রার্থী মাসুম বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের হাত পা বেধে ফেলেছেন। তার সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে নিয়মিত মাঠে যেতে দিচ্ছে না। দোকান পাট বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘরের মধ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, নৌকার বিরোধীতা করে দল থেকে বহিস্কার হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী কোথ্ থেকে এই সাহস পাচ্ছেন ? বিষয়টি নিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফরিদ বলেন, তাকে হেয় করার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে এসব লোকজন বাড়ি ছেড়েছে।
ওরা মিডিয়ার সামনে যা বলছে সবই মিথ্যা। তিনি বলেন, আমার কোন লোক তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও মারধর করছে তারা প্রকাশ করুক। যদি করতে পারে তবে আমি নিজেই শাস্তি দেব। নৌকায় যারা ভোট দিয়েছেন তারা তো সবাই বাড়িতে, ওরা কেন বাইরে প্রশ্ন তোলেন ফরিদ। মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার ছেলে ভোটের আগে ন্যাংটা হয়ে আমার বিরুদ্ধে নৌকায় ভোট করেছে এ কারণে আত্মভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন। তাকে কেউ ভয়ভীতি দেখায়নি। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, যারা বাড়ি ছেড়েছেন তারা এক রকম ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। আমরা তাদের বলেছি বাড়ি আসতে। কেও তাদের উপর জুলুম বা নির্যাতন করলে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু তারা বাড়ি ছেড়ে এখানে ওখানে বসবাস করছেন।
Comments
comments