২ কোটি সোয়া ৬০ লাখ টাকা তছরুপ
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি ঃ
প্রিমিয়ার ব্যাংকের স্থানীয় একটি শাখায় ব্যক্তিগতভাবে সিটি করপোরেশনের নামে একাউন্ট খুলে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা তসরুফের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।
গাসিকের একটি সূত্র জানায়, পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই জাহাঙ্গীর আলম অতি গোপনে নিজের একক পরিচালনায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের স্থানীয় কোনাবাড়ী শাখায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নামে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি হিসাব খুলেন। যার চলতি হিসাব নম্বর ০৩৫১১১০০০০০৫৭৮। ডকুমেন্ট ত্রুটির কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৩ মার্চ হিসাবটি বন্ধ করে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
২৫-০২-২০২০ ইং তারিখ হিসাবটি চালুর দিনই গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়িতে অবস্থিত ইস্পাহি ফুড লিঃ কারখানার লে-আউট প্ল্যান অনুমোদনের ফি ও জরিমানা বাবদ ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকার পে-অর্ডার এবং একই দিন ৫০ লাখ টাকার অপর একটি পে-অর্ডার জমা হয়। এছাড়া ২৭-০২-২০২০ ইং তারিখে ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৫.৫০ টাকার পে-অর্ডার, ২৯-০৭-২০২০ ইং তারিখে ৮৫ লাখ ও ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯০ টাকার পৃথক দুটি পে-অর্ডার জমা হয়।
প্রায় ১ বছর ৩ দিন স্থায়ী এ হিসাব নম্বরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে মোট ২ কোটি ৬০ লাখ ২৪ হাজার ৯শ’ ৯৯.৫০ টাকার পে-অর্ডার জমা হয়। হিসাবটি বন্ধের সময় ব্যালেন্স ছিল ৮ হাজার ২৩৫.৫০ টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৮ হাজার ৫ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমকে ফেরত দিয়ে বাকি ২৩০.৫০ টাকা একাউন্ট ক্লোজিং চার্জ হিসেবে কেটে নেয়। এ হিসাব থেকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ৯৩৩২৮২৭ নং চেকের মাধ্যমে গত ২৭-০২-২০২০ ইং তারিখে জনৈক শামীম হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা, মেয়র নিজে ০৫-০৩২০২০ ইং তারিখে ৯৩৩২৮২৮ নং চেকের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা, মেয়রের ব্যক্তিগত কর্মচারী শহীদুলের মাধ্যমে ০৬-০৮-২০২০ ইং তারিখে ৫০৬১৯২ নং চেকের মাধ্যমে ১ কোটি টাকা, মেয়রের বাসার ব্যক্তিগত কর্মচারী পল্টু চাকমাকে দিয়ে ৫০৬১৯১ নং চেকের মাধ্যমে ১০-০৮-২০২০ ইং তারিখে ৩০ লাখ টাকা এবং একই বছরের ১৮ ও ২০ আগস্টে যথাক্রমে ৫০৬১৯৩ ও ৫০৬১৯৪ নং চেকের মাধ্যমে যথাক্রমে ৩০ ও ২০ লাখ টাকা শহীদুলের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কোনাবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক এম মোর্শেদ খান বলেন, হিসাবটি চালু ও বন্ধের সময় আমি এ শাখায় কর্মরত ছিলাম না। আগের ম্যানেজারই এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন। এব্যাপারে তৎকালীন ম্যানেজার মো. মোতালিব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে ব্যাংকটির একজন কর্মচারী জানান, হিসাবটি মেয়রের এককভাবে পরিচালনার ব্যাপারে পরিষদের মাসিক সভার সিদ্ধান্তের রেজুলেশন কপি আছে কিনা সাবেক ম্যানেজার মেয়রের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তখন মেয়র জানান, এব্যাপারে মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী মিটিংয়ে রেজুলেশন হবে, তখন ব্যাংকে কপি পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতির কারণে পরিষদের মাসিক সভা করতে না পরাসহ বিভিন্ন অজুহাতে মেয়র অহেতুক কালক্ষেপনের আশ্রয় নেন।
এদিকে এব্যাপারে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হিসাবটি চালু করেননি দাবী করে বলেন, ‘যারা আমার বিরুদ্ধে টেপ রেকর্ডার বার করছে, ভিডিও বানাইছে, গোপনে অনেক কিছু করছে, মিথ্যা তথ্য দিছে, তারাই যদি দুই বছর আগে এইত্যা করতে পারে, তারাই তো বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টেও আমার নাম দিয়া, আমার নাম ব্যবহার কইরা, আমার ভূয়া সিংনেচার দিয়া একাউন্ট কইরা; আমারে ফাঁসাইবার লাইগ্যা এইডা করছে।’