মোঃ এরশাদ, (হাটহাজারী) চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ::
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিশ মিনিটের ব্যবধানে ৪টি অস্ট্রেলিয়ান গরুর মৃত্যু হয়েছে। জীবন চালিকাশক্তির একমাত্র মাধ্যম হারিয়ে দিশেহারা খামারি ইয়াছমিন আক্তার। রোববার (১৭ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাদামতল এলাকার মেহের আলি চৌধুরী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইয়াছমিন আক্তার (৪৫) স্বামী পরিত্যক্তা নারী। নেই পিতা নেই কোন ভাই বোন। পিতার বাড়িতে বৃদ্ধ মাকে নিয়েই ঝুপড়ি ঘরে বসবাস। বিভিন্ন ব্যাংক এনজিও থেকে ঋণ নিয়েই হয়ে উঠে ক্ষুদ্র খামারী। ১৬বছর ধরেই ঋণ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কয়েকটি দুধের গরু দিয়ে চালাচ্ছেন খামার। দৈনিক দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই সাপ্তাহিক মাসিক কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি সংসার চলছে মা মেয়ের। কিন্তু হঠাৎ অসহায় সেই খামারির উপর নেমে আসে বিপদ। এযেন মরার উপর খরার গা। এক রাতেই একের পর এক গরু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শেষ হয়ে যায় সব স্বপ্ন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গরুগুলো হারিয়ে মাটিতে গরাগরি করছেন ইয়াছমিন। মনকে কোন মতেই বুঝাতে পারছেন না। কোন দোষে আল্লাহ এ শাস্তি দিয়েছেন। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে পরিশ্রম করেই গরুগুলো লালন পালন করেন। এগারটি ব্যাংক এনজিও থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ। এখন এ টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে। ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরটি ছাড়া কোন সম্বল নেই যে বিক্রি করে পরিশোধ করবে। কে তার পাশে দাড়াবে। গরুগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮ লাখের ও বেশি হবে বলে জানান খামারি।
দৈনিক একুশের বাণীকে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মত সন্ধায় জমিন থেকে কেটে আনা এলোচি শাক (এক প্রকারের শাক) খাওয়ান সাথে কুড়া ভুষি। কোন রকম ওষুধও খাওয়াননি। রাতে দশটার দিকে হঠাৎ সবচেয়ে বড় গরুটি (গাভিন) জিহ্বা কামড় দিয়ে মাথা মাটিতে পড়ে যায়, মুহুর্তের মধ্যে শেষ। তার পরপরই বাকী তিন গরুর মৃত্যু। চিকিৎসককে কল করার সময় দেয়নি। বেঁচে আছে ছোট্ট একটা বাচুর।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, সিএসএস, প্রত্যাশী, আস্থা ফাউন্ডেশন, ঘাসফুল, বাংলাদেশ এক্সটেনশন এডুকেশন সার্ভিসেস (বিজ), টি এম এস এস, এস এস, আশা ব্যাংক, সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে বিভিন্ন সময়ে ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ। জানিনা এখন কি হবে।
এদিকে ঘটনার পর পরই ঋণ দেয়া বিভিন্ন এনজিও’র কর্মকর্তা, পশু চিকিৎসক ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নাবিল ফারাবি মুঠোফোনে বলেন, উনি ক্ষুদ্র খামারি। দীর্ঘদিন ধরে খামারের সাথে জড়িত। একসাথে চারটি গরু মারা যাওয়া খুবই মর্মান্তিক। কেন মারা গেল তা উদঘাটনে কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল আলম ঘটনা শুনে বলেন, যত ধরনের সহযোগিতা করা যায় তা করার চেষ্টা করা হবে।