ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে সরকার অনুমোদনহীন লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে মোটা টাকার বিনিময়ে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট বিক্রির রমরমা ব্যাবসা চলছে। বিভিন্ন পদের মেডিকেল টেকনোলজির সার্টিফিকেটের জন্য এখন আর পড়ালেখার প্রয়োজন নেই।
টাকা দিলেই কোনো ঝামেলা ছাড়া সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মেয়াদের ভূয়া ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট। তবে এসব ডিপ্লোমা সনদের শিক্ষা মন্ত্রালয় থেকে স্বীকৃত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোন নিবন্ধন নেই। কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা (কোলা রোডের) পশ্চিম পাশে জাল সার্টিফিকেট তৈরির সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য এখন চরমে। প্রতিদিনই চলছে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড। এ চক্ররা জাল মেডিকেল টেকনোলজি সনদ হরহামেশাই ২৫ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে। লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি ট্রেনিং সেন্টারে সব মিলিয়ে প্রায় পঁচিশ পদের ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে কোর্স সম্পর্ণ করতে কোন শিক্ষাগতা যোগ্যতাই লাগেনা।
ওই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাইমারি গন্ডি না পেরনো অনেক মানুষ টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে ভর্তি হয়ে সনদ কিনেছে এরকম একাধিক স্থানীয় সূত্রে জানাযায়। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রাজিব খুবই গোপনে বিভিন্ন কৌশলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কালীগঞ্জের লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি ট্রেনিং ইনিস্টিউট সোসাইটি পরিচালিত একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামের অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে। কথিত রাজিব ডাক্তারের প্রতিষ্ঠানে মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে দুই একজনকে আটক করলেও মূল হোতারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
এবিষয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা “লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি ট্রেনিং ইনিস্টিউটে” মঙ্গলবার দুপুরে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিক ডাঃ বিশ্বাস রাজীব কিশোর তার কোন বৈধ কাগজ-পত্র দেখাতে পারিনি। সাংবাদিকরা রুমে প্রবেশ করলে সাথে সাথে তার প্রতিষ্ঠানের নিচ তলার একটি রুম ও দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন দুই মহিলা কর্মচারী দিয়ে। রাজিব সাংবাদিকদের কোন ছবি তুলতে নিষেধ করেন তার অনুমতি বাদে । সে জানান ব্যাপারে তিনি ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে নারাজ।
আর ছবি ও ভিডিও করে কোন লাভ হবে না তার কারণ আমার প্রতিষ্ঠান ও আমার নামে অনেক নিউজ হয়েছে কেউ কিছু করতে পারিনি আর পারবেও না। কেন কিছু করতে পারবে না এবিষয়ে জানতে চাইলে কথিত হোমিওপ্যাথি ডাঃ বিশ্বাস রাজীব কিশোর বলেন,আমার পরিচয়টা দিতে চাচ্ছি না আমি সবাইকে ম্যানেজ করে চলি। আর ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসেও অনেক বার গিয়েছি। দরকার হলে আবারো যাবো কোন সমস্যা নেই।
এই প্রতিষ্ঠানে কোন কোন ডাক্তার দ্বারা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় জানতে চাইলে ডাঃ রাজীব কিশোর কোন ডাক্তারের নাম বলতে পারিননি। ডাঃ বিশ্বাস রাজীব কিশোর হোমিওপ্যাথ ডি এইচ এম এস (ঢাকা) এই কোর্স করেছেন সেটারও কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তার ব্যবস্থাপনা পত্রে ডাঃ লেখার নিয়ম আছে কি না জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তার লেখা নিয়ম আছে। আমি কোলকাতা থেকে সাত দিনের কোর্স করে এসেছি। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে ম্যানেজিং কমিটি কিংবা পরিচালনা পর্ষদ লাগে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির মধ্যে রাজিব করেছেন অনিয়ম।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির মধ্যে রাজিব তার নিজের বাবা-মা ও ভাই বোনদের কে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে করে সে সকল অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে। রাজিবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবনে টাঙানো নেই জাতীয় পতাকা। বিভিন্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানাযায় এরকম অবৈধ লাইফ সাইন্স নামে ঝিনাইদহ শৈলকুপা ও পাশ্ববর্তী যশোর জেলাতে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন রাজিব। এদিকে লেখাপড়া না করে এভাবে টাকার বিনিময়ে ভুয়া ডাক্তারের সার্টিফিকেট কেনার নিয়ম অব্যাহত থাকল।
বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যারা সার্টিফিকেট পায় তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে বলে অভিযোগ করেছেন নিয়মিত ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা।
একই সঙ্গে এর একটা খারাপ প্রভাব সমাজের ওপর পড়বে বলে মনে করেন সমাজের অনেকে সচেতন স্থানীয় মানুষ। লাইফ সাইন্স মেডিকেল টেকনোলজি টেনিং সেন্টারের অনিয়মের বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন অফিসার সুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের নাম আজই শুনলাম। আমি ওই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ নিবো। আগামীকাল সেখানে যাবে এবং তথ্য সঠিক হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কারণ ভূয়া প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।