ঝিনাইদহ সংবাদদাতা-
ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য অফিসের হিসাবরক্ষক শওকত আলীর কাছে টাকা দিলেই মেলে সকল প্রকার সরকারি দপ্তরের চাকরি। এজেনো এক আলাদিনের চেরাগ যে ঘষা দিলেই হয়ে যায় মূল্যবান চাকরি।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায় শওকত আলী নিজে মৎস্য বিভাগে চাকরি করলেও সে প্রাইমারি,স্বাস্থ্য,পরিবার পরিকল্পনা, পুলিশ, বিজিবি, গণপূর্তসহ একাধিক সরকারি অফিসে মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি দিতে পারেন। আর এসব চটকদার কথা বলে শওকত আলী হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ,লাখ টাকা। মূলত ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার অসহায় বেকার যুবক, যুবতীর বেকারত্বের টার্গেট করে শওকত আলী চাকরির প্রতারণার ফাঁদ পাতেন।
শওকতের পাতা ফাঁদে পড়ে বহু যুবক, যুবতি বাবা মায়ের শেষ সম্বল সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে ধারদেনা করে সমিতির কিস্তি তুলে চাকরির টাকা তুলে দেয়। কিন্তু চাকরি নামের সোনার হরিণ জোটে না কারো ভাগ্য। আর সেই চাকরির টাকা আত্মসাৎ করে মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী শওকত নিজে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে বহু জায়গা জমি। বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানাযায় শওকত আলীর চাকরি দিতে না পারার পর তাঁর কাছে টাকা ফেরত নিতে গেলে সে নানা রকম তালবাহানা শুরু করে। এমনকি ভাড়াটিয়া মস্তান ঠিক করে পাওনাদারদের নানা রকম হুমকি ধামকি দেয়।
মহিলারা চাকরির টাকা ফেরত চাইতে গেলে তাদের চরিত্রের উপর কালিমা লেপন করার চেষ্টা করেন শওকত আলী। চাকরির প্রতারণা ভুক্তভোগী এক মেয়ের কাছ থেকে জানাযায় সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির জন্য ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুঠি দুর্গাপুরের আরশেদ জর্দ্দারের মেয়ে ফাহিমা খাতুন মৎস্য অফিসের সহকারি শওকত আলীর কাছে ৮ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ৪ লক্ষ টাকা অগ্রিম দেন।
কিন্তু ফাহিমার চাকরি দিতে পারেনি প্রতারক শওকত। টাকার শোকে ফাহিমা খাতুনের বাবা প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। চাকরির টাকা দেবার বিষয়ে ফাহিমা জানান,কোন এক সূত্র ধরে শওকত আলির সাথে তার পরিবারের পরিচয় হয়। তারপরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত হয়ে শওকত আলী ফাহিমা কে বলেন সামনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ আমার কাছে ৮ লক্ষ টাকা দিলে তোমাকে শিক্ষক হিসাবে চাকুরী দেয়া সম্ভব।
তবে চাকরির আগে ৪ লক্ষ আর চাকুরী হয়ে গেলে আরো ৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে। চাকরির আশায় শওকত আলির এমন প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় ফাহিমা।
শওকত আলীর অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারি জানান ইতিপূর্বে আরো বেশ কয়েকজনের সাথে এরকম ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে তারা বহুবার মৎস্য অফিসে চাকরির টাকা ফেরত নেবার জন্য এসেছেন।
চাকরির টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে ঝিনাইদহ মৎস্য অফিসের হিসাবরক্ষক শওকত আলীর সাথে সরাসরি কথা বললে সে বলে আমি চার লক্ষ টাকা নেইনি। আমি তাদের নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম। যাহা আমি একটি স্ট্যাম্প এর মাধ্যমে লিখিত সালিশের মাধ্যমে ফেরত দিয়েছি। টাকা ফেরতের কোন লিখিত প্রমাণাদি তার কাছে আছে কিনা তা জানতে চাইলে সে বলেন ২/১ দিন পরে আসেন। দুই এক দিন পরে গেলে সে বলে যে আমার কাছে তার টাকা ফেরত দেয়ার প্রমাণ আছে। তবে আপনাকে দেখানো যাবে না। আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আমার হাত অনেক মোটা।
হিসাবরক্ষক শওকত আলী চাকরি দেবার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য অফিসার ফরহাদুর রেজার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি একটি মেয়ের কাছে জানতে পেরেছি। আমার অফিসে এসে খুব কান্নাকাটি করছিল মেয়েটি। চাকরির টাকার কোন প্রমাণ আমার কাছে নেই। সেকারণে আমি শক্ত ভাবে কিছু করতে পারছিনা। তবে এবিষয়ে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এবং তদন্ত সাপেক্ষে আমার অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানাবো। চাকরির কথা বলে টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায়।