স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া, জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলা। অথচ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বলা আছে বিবাহিত, ছাত্রত্ব নেই বা চার্জশিটভুক্ত আসামিরা ছাত্রলীগে আসতে পারবে না। বিবাহিত অছাত্ররা নেতৃত্বে আসে তাহলে কমিটি বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাবে। এছাড়াও গঠনতন্ত্রে আরো স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, বিবাহিত বা ছাত্রত্ব নেই এমন কেউ পদে তো দূরের কথা তারা কোন সদস্যই থাকতে পারবে না।
জানা গেছে, পূবাইল থানা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ। বিভিন্ন পদের পার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়েছে মহানগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। পূবাইল থানা ছাত্রলীগের কর্মী সভা পূবাইল আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে প্রধান অতিথি মেহের আফরোজ চুমকির উপস্থিতিতে গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর
পূবাইল থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির গঠনের লক্ষে গত ৭ নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়া হয়। তবে পূবাইল থানা কমিটির সভাপতি পদে আবেদনের জন্য ইতিমধ্যে যারা প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন বিবাহিত ও কিশোর গ্যাং লিডার আরাফাত রহমান মেরাজ।
জানা যায়, ৪২ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার হোসেন সজিব কে ২০২১ সালের ৪ মার্চ মারুকা বাজার ভূতেরবাড়ী রেষ্টুরেন্ট এর নিচে আরাফাত মেরাজসহ ১০ জনে মিলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে মারাত্মক ভাবে জখম করে। এ বিষয়ে পুবাইল থানায় কিশোর গ্যাং জড়িত থাকার অপরাধে মামলা দায়ের করা হয় আরাফাত রহমান মেরাজের বিরুদ্ধে এবং মটর সাইকেল ও গাড়ি প্রায় ৬ মাস আটক রাখা হয়।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, মেগডুবি ৪০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরাফাত রহমান মেরাজ। বর্তমান পূবাইল থানা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত সে। অভিযোগ থাকা স্বত্বেও পদ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আরাফাত রহমান মেরাজ।
এদিকে উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর মেঘডুবি এলাকার জিল্লুর রহমান বাছেদ এর পুত্রের সাথে ভোগড়া এলাকার এস এম আকরাম হোসেন’র বড় মেয়ে আরেফিন শারমিন আখির গত ১৯/০৮/২০১০ সালে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর বাড়ী নং-৭৭, রোড নং-১৪
সেক্টর ১১ উত্তরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বর্নালংকার আসবাবপত্রসহ নগদ টাকা দেওয়া হয় আরাফাত রহমান মেরাজকে।
পরবর্তী লোভের বশত আরাফাত রহমান মেরাজ ও তার পরিবার বর্গ মেয়ের বাবা এস এম আকরাম হোসেন’র কাছে আরো ১০ লাখ টাকা দাবী করেন। দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আরাফাত রহমান মেরাজ, মা মাজেদা বেগম, নাছরিন টুম্পা, জিল্লুর রহমান বাছেদ সকলে মিলে আরেফিন শারমিন আখির উপর নানাভাবে মানসিক অত্যাচারসহ শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো। এতে আরেফিন শারমিন আখি তাদের অন্যায় অত্যাচার নীরবে সহ্য করে যেত। পরবর্তী গত ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই বাড়ী নং-৭৭, রোড নং-১৪ সেক্টর ১১ উত্তরা এলাকায় ভারা বাসা বাড়িতে আরাফাত রহমান মেরাজের পরিবারবর্গ মিলে দাবীকৃত ১০ লাখ টাকার জন্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। এরপর কোন উপায়ন্ত না পেয়ে মানসিক ও শারীরিক ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ২৯ জুলাই ভোরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে আরাফাত রহমান মেরাজ ও তার পরিবারবর্গ।
এবিষয়ে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মোশিউর রহমান সরকার বাবু মেরাজের বিবাহের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন,বিষয়টি আমি শুনেছি, আমার কাছে সব ডকোমেন্ট রয়েছে। ছেলে-মেয়ে দুজনেই অন্যত্র পালিয়ে যায়। তখন তারা দুজনেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিল এবং এ নিয়ে এলাকায় গ্রাম্য শালিশ বসে। শলিশে আরাফাত রহমান মেরাজের সাথে আরেফিন শারমিন আখির বিয়ের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর মেয়েটি ২০১৩ সালে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার পর মেয়েটির বাবা ছেলেসহ তার পরিবারের সবাইকে জড়িয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০১৬ সালে উক্ত মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের বেকুসুর খালাস প্রদান করেন এবং মামলাটি খারিজ করে দেন।
৪১ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত বলেন, বিবাহিত মাডার মামলার আসামী ও মাদকের সাথে জড়িত পূবাইল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী অছাত্রকে থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই না।
সাবেক কাউন্সিলর ও পূবাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ মাসুদুল হাসান বিল্লাল বলেন–মাডার মামলার আসামী ও বিবাহিত মানুষকে ছাত্র লীগের সভাপতি হিসেবে চাই না।
পূবাইল থানা ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান আশিক বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে যোগ্য লোকদের নিয়ে আসা হোক, এটা আমাদের দাবী। এছাড়াও বিবাহিত বা ছাত্রত্ব নেই এমন কেউ এই কমিটিতে জায়গা পাবে না । আর কোন হত্যা মামলার আসামীর পদ বা সদস্য হওয়ার সুযোগও নেই বলে তিনি জানান। একজন বিবাহিত ও নিজ স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী আসামিকে সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করলে গাজীপুর সহ পুবাইলের ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না বলে অনেকেই মনে করছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাত মেরাজ বলেন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে আগামী অল্পকিছুদিনের মধ্যে পুবাইল থানা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হবে ওই কমিটিতে আমি সভাপতি হিসেবে যাতে না আসতে পারি সেজন্য একটি কুচক্রী মহল কাজ করছে। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন এগুলো অনেক আগের মামলা এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই।
Comments
comments