নিজেস্ব প্রতিবেদক
মাগুরা শ্রীপুর থানার আমলসার ইউনিয়নের বিলনাথুর গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে শাহিনের বিরুদ্ধে পাশের গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক বার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ন্যায় বিচার পাবার জন্য হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবারের স্বজনেরা।
এবিষয়ে মাগুরা জর্জকোর্টে নারী শিশু বিশেষ ট্রাইবুনালে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছে ১ ভুক্তভোগী নারী। ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, শাহিন আর আমার বাবার বাড়ি একই গ্রামের পাশাপাশি হওয়াতে আমার দুজনের পূর্বপরিচিত। শাহিন যখন ফরিদপুর পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করত তখন থেকেই সে আমার সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে শাহিন আমাকে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে আমিও বিশ্বাস করে তার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। আমাদের সম্পর্ক টানা আট বছর ধরে চলে।
নিজের পায়ে দাঁড়ানো ও অসুস্থ মা ভাই, বোনদের সাংসারিক খরচের জন্য আমি ঢাকায় পোশাকখাতে ছোট একটা চাকরি নিই। আমার চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকি আর শাহিন সেজন্য বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ঢাকায় যাই। আমি শাহিনের নিয়মিত পড়ালেখার খরচ দিয়ে সাহায্য করতাম। তারপর থেকে, আমাদের সম্পর্ক আরো পরিপূর্ণ ভালবাসায় রুপ নেয়। এরপরে শাহিন সেনাবাহিনীতে সিভিল ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যে একটি চাকরি পায় বলে জানায়। আর সরকারি চাকরি পাওয়ার পর থেকেই শাহিনের আচরণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
শাহিনের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে থাকে। এজন্য আমি শাহীনকে বিয়ের জন্য চাপ দিই কিন্তু শাহিন কোন মতেই বিয়ে করার জন্য রাজি হয় না। আর একারণেই একদিন শাহিন আমাকে মাগুরা পুলিশ লাইনের পাশে ডেকে নিয়ে একটি কাগজ দেখায় সেই কাগজ দেখিয়ে বলে এটা আমাদের বিয়ের কাবিননামা। আজ থেকে তুমি আমি স্বামী-স্ত্রী। এরপর থেকেই শাহীন আরো বেশি আন্তরিক ভাবে আমার সাথে মেলামেশা শুরু করে আমিও বিশ্বাস করে তাকে মেনে নিই। কিন্ত পরবর্তীতে আমি শাহিনের বাড়িতে গিয়ে সংসার করতে চাইলে আমাকে নিতে সে অস্বীকৃতি জানায়। তখন শাহিন বলে তুমি আমার কেউ না তোমার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
এছাড়া ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন,শাহিন আমার সাথে অন্তরঙ্গ মেলামেশা করে সেই সমস্ত দৃশ্য ছবি আমার অজান্তে গোপনে তার ব্যাক্তিগত মোবাইলে ধারন করে। এছাড়া পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে এগুলো ফেসবুক,ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দেন। শাহিনের এসব উল্টাপাল্টা কথাবার্তায় আমি দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। আর সেকারণেই আমি নিজের স্বামীর স্বীকৃতি দাবিতে নারী নির্যাতন দমন আইন(২০০০) পরবর্তী সংশোধনী ২০০৩ ৯(১) পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২ এর ৮( ১) ৮(২) ৮ (৩) ধারায় কোর্টে মামলা দায়ের করি।
কোর্ট থেকে মামলাটির তদন্ত করার জন্য ঝিনাইদহ পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) কাছে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। দু’বার পিবিআই অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমি আমার মামলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই ঘটনার সঠিক ন্যায় বিচার আশা করি। আমি বড়ই অসহায়। মামলার তদন্তকারী ঝিনাইদহ পিবিআই অফিসার সরদার বাবরের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে দুজন সাক্ষীর বাকি ছিল। আমি সময়ের আবেদন করেছিলাম।পরবর্তী কোটে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করবো। তদন্ত চলাকালীন এর বেশি কিছু বলা যাবে না।
নারী নির্যাতন মামলা ও ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার শাহিনের মুঠোফোনে ও শাহীনের গ্রামের বাড়িতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। মামলার বিষয়ে দুজন সাংবাদিক শাহিনের গ্রামের বাড়িতে খোঁজে নিতে গেলে শাহিনের বাবা ও বড় ভাইয়েরা রেগে ওঠেন। তাঁরা বলেন শাহীন কোথায় থাকে আমরা জানিনা। আপনারা কি জন্য বাড়িতে এসেছেন যা করার সেটা করেন। আমরা যা বলার কোর্টে গিয়ে বলবো। শাহিন বর্তমানে কোথায় চাকুরিরত আছে সেটা জিজ্ঞাসা করলে সেই তথ্য দিতে তার পরিবারের লোক কেউ রাজি হয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানার চেষ্টা করা হলে ওই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জন ব্যাক্তি বলেন, শাহীন বর্তমানে হয়তো বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট কিংবা টাঙ্গাইল ক্যান্টনমেন্ট সৈনিক ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সিভিল বিভাগের ভিতর কর্মরত আছে এর বেশি জানিনা।