কিছুদিন আগেই দেখেছিলাম ভালোবাসার উদাহরন খুঁজকে গিয়ে সব্যসাচী উদাহরন ছিলো, আজ ভালোবাসা দিবস ঠিক সব্যসাচী উদাহরন না হলেও উদাহরন হবে কিছু অদৃশ্য শারীরিক নির্যাতন। ভালোবাসলে প্রমান দিতে হবে এমন কিছু ভুলো কথায় কিছু জীবনের অন্ধকার শুরু হবে, অপ্রিয় হলেও এটিই ঘটে। সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো প্রমান চাইনা বরং নিজের আপন করে প্রমান দেখিয়ে দেয়।
ভালোবাসার উদাহরণ হতে হলে সব্যসাচী হওয়া লাগেনা, আমাদের আশেপাশে ও অনেক উদাহরন আছে যা আমরা চোখে দেখতে পাইনা কারন তারা সেলিব্রেটি না। দুই দিন পর যখন সব্যসাচী বিয়ে অথবা প্রেম করবে এসব মানুষেরাই তাকে গালি দিবে।
আসলে আমরা কখন কি চাই কি দেখতে চাই আমরাও জানিনা। সহজ একটা উদাহরন দি ২০২০সাল সারাদেশে করোনার ভয়াল থাবা কেউ কারো কাছে ভয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়না ঠিক সে সময়ে আমি ভালোবাসার প্রকৃত উদাহরন দেখেছি এক আংকেল আন্টির।
আন্টিটার কিডনীর সমস্যা ছিলো, ডায়ালাইসিস করা লাগতো আমি ২১দিনে আন্টিটাকে চার বার ডায়ালাইসিস করানোর জন্য ভর্তি ও ডিসচার্জ করাতে দেখেছি, তো ওনি এই বলতো ভালো লাগে, এই বলতো খারাপ লাগে, এই বলতো রিলিজ নেও আমি বাসায় যাবো বাট আংকেলটা কখনো বিরক্ত হতো।
রমজান মাস দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে থাকতেন কখনো বিরক্ত হতে দেখিনি, ওনার ৩টা মেয়ে ছিলো মেয়েরা কোভিডের ভয়ে মাকে দেখতে আসেনি যখনি মা ফোন করতো একটু আয় তোদের দেখতে ইচ্ছে করে মেয়েরা উত্তর দিতো তোমাদের জামাই দিবেনা আমার বাচ্চাদের যদি কোভিড হয়, খুব আপসোস হতো মহিলার এই আশায় থাকা দেখে, বাট তার মেয়েরা না আসলেও তার স্বামী কখনো বিরক্ত হয়নি। অনেক নিয়ে আন্টির নাম্বার টা নিলাম, তো কিছুদিন পরপর খোঁজ নিতাম।
হঠাৎ একদিন কল দেয়ার পর বলে আমিতো হাসপাতালে আজ এক সপ্তাহ ধরে। আমিও সেদিন হাসপাতালে গিয়েছিলাম মা কে নিয়ে, পরে ওনাকে দেখতে গেলাম তখন আন্টি বললো ওনি ১৩বছর ধরে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন।
আমাকে বলে তোমার আংকেল কখনো বিরক্ত হয়নি, আমার জন্য নিজের জায়গা জমিন সব বিক্রি করেও চিকিৎসায় পিছপা হয়নি ৩বার ইন্ডিয়া নিয়ে গেছিলো।
অনেক অবাক হয়েছিলাম ভাবলাম এই বুঝি ভালোবাসার উদাহরন, সেবার ৪দিন হাসপাতাল ছিলাম প্রতিদিন ই ওনাকে দেখতে যেতাম, বাসায় আসার পর প্রায় ফোন করে খোঁজ নিতাম এভাবে ওনি টানা ২মাস হাসপাতাল ছিলেন বাট ওই মানুষটা কখনো ছেড়ে যাননি ১মি.ও।
হঠাৎ একদিন সকালে আন্টির নাম্বারটা থেকে ফোন আসলো ধরার পর আংকেলটা বললো তোমার আন্টি আর নেই, সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম কেমন যেনো কান্নাও এসেছে, নিজেই নিজেকে বললাম ভালোবাসা বুঝি এভাবে শেষ হয়ে যায়।
তারপর অনকোলজির বেডে এক আন্টির সাথে পরিচয় ওনি রক্তের খোঁজ করছিলেন আমি বললাম আপনি চিন্তা করিয়েননা আমি দেখছি রক্ত পাওয়া যাবে। ওনার ছিলো ব্রেস্ট ক্যান্সার, টানা ১২বছর ধরে ক্যামো নিয়ে বেঁচে আছেন বললেন অপারেশন করা যায়নি ওনার, এই ১২বছরে সব জায়গা সম্পতি বিক্রি করেও প্রিয় মানুষটির চিকিৎসায় তিনি পিছপা হননি, ২০২১এই তিনি মারা গেছেন সেদিন পর্যন্ত আরেক উদাহরন দেখলাম ওই আংকেল আন্টির।
কিছু ডাক্তাররাও উদাহরন আছে আমার দেখা উদাহরন, এরা প্রত্যেকটা মানুষ প্রিয় মানুষটার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত কোনো কিছু্র কাছে হার মানেনি, ছেড়ে যায়নি প্রিয় মানুষটিকে । ভালোবাসা গুলো বুঝা যায় সামান্য সমস্যায় পরলে কিংবা অসুস্থ হলে যা কম বেশি প্রতিনিয়ত দেখি। এরকম অনেক উদাহরন আছে যেগুলো দিলে শেষ হবেনা, কিন্তু সেগুলো ভাইরাল হয়না কারন তারা সেলিব্রেটি না।
হ্যাঁ ভালোবাসার মানুষটার মূল্য সেই বুজে যে প্রিয় মানুষটা হারায়। পৃথিবীতে ভালোবাসা প্রথম দাবিদার মা বাবা,অনেক সন্তান আছেন মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয় তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা, আরে এই মন ভোলানো স্ট্যাটাস দেখে খুশি হওয়ার কিছু নেই যে মানুষ নিজের জন্মদাতাদের ভালোবাসতে পারেনি সে তোমাকে সত্যিকারে ভালোবাসবে তার গ্যারান্টি কি? যে মা বাবাকে সত্যিকারের ভালোবাসতে পারবে সে অন্য কাউকেও পারবে সত্যিকারে ভালোবাসতে।
ভালোবাসা বেঁচে থাকুক সকল মানুষের অন্তরে ভালো থাকুক সকলের প্রিয় মানুষ গুলো। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও ভালোবাসার মানুষগুলো বেঁচে থাকুক মুনাজাত কিংবা প্রার্থনায়।